বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৪ অপরাহ্ন
বরগুনা (বেতাগী) থেকে অলি আহম্মেদঃ— বেতাগীতে সিআইপিআরবি‘র সামাজিক ময়নাতদন্ত পদ্ধতি পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছে। পানিতে ডুবা শিশুর সামাজিক সমস্যা সমুহ চিহ্নিত করণ এবং এ ধরনের দূঘটনা সমুহ কেন হয় তার কারণ সমুহ খুঁজে বের করার জন্য সামাজিক ময়না তদন্ত করা হয়। সামাজিক সচেতনতাবৃদ্ধি বিশেষ করে এখানে পানিতে ডুবা যাওয়া মৃত্যুগুলোর প্রধান কারন তা জানানো হয়। যাতে ভবিষৎতে এ ধরনের মৃত্যুগুলো কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়। সামাজিক ময়না তদন্তে প্রতিবেশি, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বর, স্কুল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, এনজিও কর্মী সহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন। একটি মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৫০ থেকে ৬০ জন মা’কে একত্রিত করে মৃত ব্যক্তির বাড়ির আঙ্গিনায় এক থেকে দুই ঘন্টা ব্যাপি এ সামাজিক ময়নাতদন্ত করা হয়।
এ কার্যক্রম বাস্তাবয়ন করছে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রিচার্স, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) নামের একটি বেসরকারি সংগঠন। অস্টেলিয়ার দ্যা জজ ইনষ্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের কারিগরি সহায়তায় এতে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাজ্যের দ্য রয়াল ন্যাশনাল লাইফবোর্ট ইনস্টিটিউশন।
সিআইপিআরবি‘র বেতাগী প্রকল্প অফিস জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বরগুনার বেতাগী উপজেলার ১টি পৌরসভা সহ ৭টি ইউনিয়নের বিবিচিনির লায়েছ খানের মেয়ে মাঈশা আক্তার, দেশান্তরকাঠি গ্রামের মোঃ আল আলামিনের শিশু আলিছা, বেতাগী পৌরসভার মোঃ বাদলের ছেলে মোঃ আলিফ ইসলাম, বেতাগী সদর ইউনিয়নের শুশীল মিস্ত্রীর ছেলে রুদ্র মিস্ত্রী, মোঃ বেলাল হোসাঈনের মেয়ে আনিকা সুলতানা, জাহিদ হোসেনের ছেলে মোঃ আব্দুল্লাহ, বুড়ামজুমদারের মোঃ মনিরের ছেলে মোঃ হোসাঈন, মোঃ মতির ছেলে ইশা, কাজিরাবাদের নজরুল হোসেনের ছেলে মোঃ ফেরদৌস, পরিতোষ সিকদারের মেয়ে স্নিগ্ধা, সড়িষামুড়ি ইউনিয়নের রেজাউল করিমের ছেলে তাওরাত ও মোঃ মনোয়ার খানের ছেলে মুসা করিমের সামাজিক ময়নাদতন্ত সম্পন্ন করা হয়। আর এ কার্যক্রমে কমিউনিটির প্রায় ১২ ‘শ মানুষ অংশ গ্রহন করে। এর মধ্যে পুরুষ ৪১০ জন, মহিলা ৫৭০ জন ও ২২০ জন শিশু রয়েছে। সিআইপিআরবি‘র সুপার ভাইজার মোঃ ওমর ফারুক জানান, সামাজিক ময়নাতদন্তে কি কারণে মৃত্যু সংঘটিত হয়েছে ? কি করলে দূর্ঘটনার শিকার এই শিশুটিকে পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচানো যেত এবং এর পেছনে কি ধরনের সামাজিক ভুল ছিল এ সব নানান বিষয় আলোকপাত করা হয়।
ময়নাতদন্ত শেষে পানিতে ডুবা শিশুর স্মৃতিকে বহন করার জন্য ফলজ বৃক্ষরোপন করে তার নামে একটি স্মৃতি ফলক উম্মোচন করা হয়। আর যাতে কেউ পানিতে ডুবে এ ধরনের দূঘটনার কবলে না পরে এজন্য কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ কার্যক্রমের ফলে আচারণত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে , মানুষের মাঝে গুরুত্ব ও সচেতনতা বৃদ্ধি হয়েছে। যার ফলে স্থানীয়দের মাঝে এর নানা প্রভাব ফেলছে। অরক্ষিত স্থান সমূহকে বেড়া প্রদানের মাধ্যমে সংরক্ষন করা হয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ডোবা সমূহকে ভরাট করে নিরাপদ করা হয়েছে, পানিতে ডুবে যাওয়ার বিষয় মানুষের মাঝে গুরুত্বের সৃস্টি ও সচেতনতা বৃদ্ধি হয়েছে। শিশুদের দেখভালের বিষয় আগের চেয়ে অনেক উন্নয়ন হয়েছে।
বিবিচিনি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইফুর রহমান নান্টু বলেন, এ ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে অন্যান্য যাদের শিশু রয়েছে তারা আরও যত্নশীল হবে। মৃত্যু সংঘটিত হওয়ার বিষয় আলোচনা শুনে আর যাতে এভাবে কোন শিশুর মৃত্যু না ঘটে তার সতর্ক বার্তা পাচ্ছে।
পানিতে ডুবা শিশু মোঃ মুসা করিমের মা আকলিমা বেগম বলেন, সামাজিক ময়নাতদন্তে এ আলোচনার মাধ্যমে ঝুিকপূর্ণ সময় শিশুদের দেখে শুনে রাখার ক্ষেত্রে আমাদের মনের মধ্যে এক ধরনের ভয় ডুকছে। যা আগামীতে শিশুদের ইনজুরি ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
সিআইপিআরবি‘র আঞ্চলিক সন্বয়কারী মোঃ মোতাহের হোসাঈন জানান, পানিতে ডুবা প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করার একটাই দৃশ্যমান পদ্ধতি হলো সামাজিক ময়নাতদন্ত। মায়েরা যাতে বিভিন্ন দূর্ঘটনার হাত থেকে সন্তানকে রক্ষার জন্য কার্যকরি ভূমিকা পালন করে এ কারনে সামাজিক ময়নাতদন্ত করা হয়।
আমরা জনতার সাথে......“আজকের দিগন্ত ডট কম”
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত “আজকের দিগন্ত ডট কম”। অনলাইন নিউজ পোর্টালটি বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply